লোকটা নাকি ভাল ছিল না। ওরা বলত। বলত, “সাবধানে মিশবেন।
মালটা জালি।” কিন্তু আমি মিশতাম। আমার খারাপ লাগত না লোকটাকে। আমাকে দেখলেই লোকটা এগিয়ে আসত। কাঁচাপাকা দাড়িঘেরা একমুখ হাসি নিয়ে। বলত, “নমস্কার, স্যর।” আমিও নমস্কার জানাতাম। তার পর লোকটার কথা শুরু হত।
কোনও দিন মুখবন্ধটা থাকত, “মানুষ আর আগের মতো নেই স্যর, বুঝলেন।” কোনও দিন বলত, “চার ধারে এত সেয়ানা না স্যর, কী বলব?” কোনও দিন আবার সরাসরি মূল কথায় চলে যেত। লোকটা যে বাঙালি নয়, কথার টানেই তা বোঝা যেত। আলাপ হওয়ার কয়েক দিন পর আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, “আপনার বাড়ি কোথায়?” লোকটা বলেছিল, “আমি কলকাতার ছেলে স্যর, তালতলার।”
আমার দিকে তাকিয়ে বোধ হয় বুঝতে পেরেছিল, আমি ওর শিকড়টা দেখতে চাইছি। তাই নিজে থেকেই বলে উঠেছিল, “আমার ঠাকুরদার ঠাকুরদার সময় থেকে আমরা এখানে আছি। তা প্রায় দুশো বছরের কাছাকাছি হল। এখন তো আমরা কলকাতারই লোক স্যর। কী বলেন?”
আমি বলেছিলাম, “ঠিকই।” লোকটা নিজে থেকেই বলেছিল, “আমার ঠাকুরদার ঠাকুরদা এসেছিল ইউ পি থেকে। একদম গ্রাম স্যর, বেনারস থেকে অনেক দূরে। খেতিও ভাল হয় না। আমি লাস্ট গেছিলাম তিন বচ্ছর আগে, তখন সবে কারেন্ট এসেছে।” দু'-চারবার দেখা, কথা হওয়ার পরও আমি লোকটার নাম জানতাম না। যার সঙ্গে মাঝে মাঝে দেখা হয়, কথা হয়, সে আমার সঙ্গে গল্প করে, তবু তার নাম জানতে চাইনি।
জানলাম এক দিন। ওয়েলিংটন অঞ্চলের যে-সস্তার পানশালায় আমাদের দেখা হত, সেখানেই। আমাদের দু'জনের হাতেই তখন তরল আগুন। আমি ঢোকার পর লোকটা আমায় দেখে এগিয়ে এসেছিল। যেমন আসে। ‘নমস্কার স্যর' বলে সবে কথা শুরু করেছিল। হঠাৎ পিছন থেকে আওয়াজ এল, “এই নুনু।” লোকটা এক বার ভুরু কুঁচকোল। তার পর বলল, “স্যর, বুঝলেন...” আবার পিছন থেকে আওয়াজ এল, “এই নুনুলাল।” লোকটা পিছনে তাকাল। তার পর বলল, “স্যর, আজ বাজারে...”
This story is from the November 02, 2024 edition of Desh.
Start your 7-day Magzter GOLD free trial to access thousands of curated premium stories, and 9,000+ magazines and newspapers.
Already a subscriber ? Sign In
This story is from the November 02, 2024 edition of Desh.
Start your 7-day Magzter GOLD free trial to access thousands of curated premium stories, and 9,000+ magazines and newspapers.
Already a subscriber? Sign In
কবিতার খাতা
দিন শেষ হয়ে যায়। অন্ধকার নেমে আসে আকাশ থেকে। কিন্তু রোজকার মতো ঝলমলিয়ে ওঠে না তাঁর পাড়া। দোকান-বাজার। শব্দ ওঠে জেনারেটরের। বড় বড় আলো পড়ে ধ্বংসস্তূপের ওপর। যেন সেটাই মঞ্চ।
কলের গাড়ি
এক দিন আবিষ্কার হল অগ্ন্যাশয়ে বাসা বেঁধেছে কর্কট ব্যাধি, অন্তিম পর্যায়। পারিবারিক আবহাওয়ায় দ্রুত পরিবর্তন দেখা দিল। রোগশয্যায় শুয়ে সবই টের পায় শান্তিলাল। এক দিন হীরালাল সামনে এসে দাঁড়ায়।
উপেনবাবুর মেয়ে
গোকুলপিঠে খেতে খেতে ছেলেবেলার স্মৃতি জাগিয়ে তোলে, যখন শীতের সকালে মায়ের হাতে বানানো গরম গরম পিঠে ছিল সবচেয়ে বড় সুখ।
ভালবাসার গল্প
বাদামি চুলের এলা কাঁদছিল। কিন্তু অমল যেন দেখতে পাচ্ছিল বাসবকাকার মুখ। দেখতে পাচ্ছিল আবছায়া একটা ঘর। আর তার মধ্যে ছোট্ট একটা পুঁটলির মতো পড়ে আছে ওর অসহায় বাবা।
তিনি নক্ষত্র হতে জানতেন
জাকির হুসেন, তবলার অতুলনীয় জাদুকর, যাঁর স্পর্শে তবলা খুঁজে পেয়েছিল নতুন ভাষা। তাঁর প্রতিভা ও ক্যারিশমা আজও সঙ্গীতজগতে এক আলোকবর্তিকা।
সুখলালের কিস্সা
সন্ধের ভিজিটিং আওয়ারে সুখলাল দেখেছিল, ফিমেল ওয়ার্ডের আঠাশ নম্বর বেডে সাদা কাপড়ে ঢাকা একটা দেহ। মন মানতে চাইছিল না। এখনও বারবার মনে হয়, ফুলমণি বলেছিল, আজ কোথাও যেয়ো না।
১৯৬৪
শৈশবের সেই যাত্রার মধ্যে মধ্যে মিশে ছিল রোমাঞ্চ; গোয়ালন্দে গাদার মাছের কাঁটা গলায় বিঁধে যাওয়ার পর দলা করে মাখা শুকনো ভাত মুখে পুরে গিলে দেওয়ার ভিতর থেকেও আনন্দই জেগে উঠেছিল সেবার।
রক্ষক
আরিয়ানাকে নিয়ে চলে গেছে লুকাস। একা বসে আছে রাফায়েল। ভাবছে, আজ যদি ওর নিজের সন্তান বেঁচে থাকত, তবে তো কুড়ি বছর বয়স হত তার। সে হয়তো কোনও ইউনিভার্সিটিতে আন্ডার গ্র্যাড করত এখন।
ফুলের তোড়া
বাবুই মায়ের দিকে বিষণ্ণ চোখে তাকিয়ে বলল, “মা, তুমি তো রোজ দুটো খবরের কাগজ আদ্যোপান্ত পড়ো। বাবা সারা বিশ্বের খবর রাখে। একটি মেয়ে রাজনীতি করছে, এ কি খুবই বিস্ময়কর?”
সমাজের শিকড়ে
মানুষ যে ভাবে ৯ অগস্টের পর একটা সমাজে সন্নিবিষ্ট হতে পেরেছিল, তার পিছনে ছিল হৃদয়ের জোরালো টান।