ত্যাগের পথ কেন শ্ৰেষ্ঠ আনন্দ দেয়?

মানুষ শান্তির জন্য চাতকের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে। অথচ তীব্র অতৃপ্তির দহ ক্রমশ তাদের টেনে নিচ্ছে অনিশ্চিত অতলে! পরম আনন্দময় জীবনে ফেরার আলোকবিন্দু কোথায় তবে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই শুরু হয়েছে নতুন বিভাগ। এবারে দিশা দেখালেন ব্রহ্মা কুমারী সিস্টার অস্মিতা।

-  অনুলিখন সুপ্রিয় নায়েক

আমরা যে আসলে বারবার ত্যাগের কথা বলি, সেই ত্যাগ আসলে কী? ত্যাগ শব্দটি শুনলেই আমাদের মনে হয়, অর্থ, সম্পদ, পোশাক দান করাই হল ত্যাগ। অথচ প্রকৃত অর্থে ত্যাগের ধারণা হল নিজের জন্য প্রয়োজনের বেশি গ্রহণ না করা। বড় স্বল্পে জীবন অতিবাহিত করাই হল ত্যাগ। কারণ ধনসম্পত্তির তিনটি মাত্র গন্তব্য থাকে— প্রথম ভাগ নিজের ভোগের জন্য। দ্বিতীয় ভাগটি অন্যের সেবার জন্য। আর তৃতীয় ভাগের গন্তব্য হল সেই অবশিষ্টাংশ যা একজন ব্যক্তি নিজেও ভোগ করতে পারেন না, আবার অন্যের সেবাতেও কাজে লাগাতে পারেন না।

র এই তৃতীয়ভাগের ধনসম্পত্তি মালিকের কাছে থাকে না। কারও শারীরিক অসুস্থতার ন কারণে অনেকখানি অর্থ খরচ হয়ে যায়! কেউ ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে অন্যায়ভাবে যে ধনসম্পদ আহরণ করেছিলেন তা হঠাৎ ধরা পড়ে যায়! এভাবে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধন-সম্পত্তি হাত থেকে বেরিয়ে গেলে সঞ্চয়কারীর পক্ষে তা প্রবল মানসিক পীড়ার কারণ হয়ে ওঠে! সুতরাং অর্থ একজন ব্যক্তি সৎকর্মে ব্যবহার না করলে একসময় সেই অর্থ কোনও না কোনওভাবে মালিকের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বেরিয়েই যায়। অতএব অর্থ নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে বেরিয়ে যাওয়ার আগে বরং নিজের বা অন্যের ভালো কাজে ব্যবহার করে ফেলাই ভালো নয় কি? প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ, ভোগসামগ্রী বরং বেহাত হওয়ার চাইতে হিত কর্মে ব্যবহার করে নেওয়াই ভালো।

শুধুই কি অর্থসামগ্রী? আমাদের অনেক গুণও থাকে, যা লুকিয়ে না রেখে বরং অন্যের ভালো হয় এমন কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। এও একরকম দান। মুশকিল হল, দান মানেই সাধারণ মানুষের ধারণা হল নিঃস্ব হয়ে যাওয়া। অথচ সত্যি সত্যি দানের অর্থ হল নিঃস্ব নয়, বরং অনেকখানি আনন্দ ফেরত পাওয়া। সেই অসীম আনন্দের কোনও তুলনা হয় না। যাঁরা সেই আনন্দের স্বাদ পেয়েছেন তাঁরা জানেন, শুধু মাত্র প্রকৃত ত্যাগই ফিরে আসে সহস্রগুণ প্রাপ্তি নিয়ে। হ্যাঁ, এখনই হয়তো সেভাবে কোনও লাভের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না ঠিকই, তবে ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চিত রইল বইকি!