জুলুমের চাঁদা

এসব আপনার জন্য সম্ভব হয়েছে।' এত কর্কশ চাকরিতে এরকম কোমল ফল লাভ। আমার কণ্ঠ আবেগে রুদ্ধ হয়ে এল

- সুখেন্দু হীরা

আ মি ২০০৪ সালের আগস্ট মাসে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর মহকুমায় মহকুমা পুলিস আধিকারিক হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করি। এসেই যেটা আমাকে খুব বিব্রত করেছিল তা হল — খড়্গপুর থেকে ওড়িশার বালেশ্বর যাওয়ার রাস্তা যা প্রথমে ও টি রোড (ওড়িশা ট্রাঙ্ক রোড) পরবর্তীকালে জাতীয় সড়ক ৬০ নম্বর বলে পরিচিত হয়, এই রাস্তায় রাতে খুব চাঁদার জুলুম।

চাঁদার উদ্দেশ্য মহৎ। কোনও কাজের ব্যয় নির্বাহের জন্য বহু লোকের কাছ থেকে সংগৃহীত অর্থ। চাঁদার মধ্যে 'দান'-এর ব্যাপার আছে, যা কিছুটা দাতার ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করে। বাস্তবে তা আমরা দেখি না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চাঁদা একপ্রকার জোর করেই আদায় করা হয়। যাঁরা দিতে আপত্তি করেন বা দেন না, তাঁদের অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। পেতে হয় হুমকি, খেতে হয় মারধর, সবশেষে সামাজিক বয়কট।

চাঁদা নানা কাজে, নানাভাবে আদায় করা হয়। আদায়ের পন্থা অনুযায়ী প্রধানত দু'ভাগে ভাগ করা যায়। এক, স্থানীয় ক্লাবের বাড়ি বাড়ি ঘুরে চাঁদা আদায়। দুই, রাস্তার ওপর দিয়ে চলাচলকারী গাড়ি আটকে চাঁদা আদায়। স্থানীয় ‘ক্লাব' বা ‘কমিউনিটি’র চাঁদা আমরা ‘নেগোসিয়েশন' করে দিয়েই দিই। কারণ আমি যেখানে বসবাস করব, সেখানে সবাইকে নিয়েই চলতে হবে। আমি এখানে জুলুে বলব, রাস্তায় গাড়ি আটকে চাঁদা আদায়ের কথা। যেটা ভীষণ পীড়াদায়ক। এমনিতে কারও পথ আটকানো আইনত অপরাধ। আবার জোর করে চাঁদা নেওয়া যা একপ্রকার ছিনতাই বা ডাকাতির নামান্তর। তার ওপর চাঁদা না দিলে গাড়ি ভাঙচুর, ড্রাইভারকে মারধর। দুঃখের কথা যারা রাস্তায় নেমে এই কাজটা করে তাদের মধ্যে এই নিয়ে কোনও অপরাধ বা পাপবোধ নেই।

চাঁদা নানা কাজে আদায় করা হয়। যেমন— বিভিন্ন পুজো, ক্লাবের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, এলাকার কোনও উন্নয়নমূলক কাজ, রাজনৈতিক দলের সভা সমিতি, পদযাত্রার জন্য, ভোটের সময় রাজনৈতিক দলের তহবিলে দান ইত্যাদি। আমি এখানে যে চাঁদার কথা বলব, সেটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্রেফ তোলাবাজি। এজন্য এর নাম দিয়েছিলাম জুলুমের চাঁদা।