বাংলার ছেলে ভুলানো ছড়া

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেরণায় ছড়া সাহিত্য বাংলায় একটি অমূল্য ধন। 'খোকা ঘুমাল' ছড়াটি ১৭৪০ সালের বর্গি আক্রমণকালের এক ঐতিহাসিক প্রতিচ্ছবি, যা সারা বাংলাদেশে একাধিক রূপে প্রচলিত। এই ছড়াটি সংস্কৃতির এক অপরিহার্য অংশ হিসেবে নানা প্রজন্মে বাচ্চাদের মুখে মুখে বহমান।

- চন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়

লোকসাহিত্যের প্রধান অঙ্গ ‘ছেলে ভুলানো’ ছড়ার প্রথম নির্যাসটি আমাদের চেতনায় দান করেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। তাঁর লোকসাহিত্য সংকলনটি বাংলার এই শিল্পকর্মের মূল আধার। তিনি লিখেছেন, 'এই সকল ছড়ার মধ্যে একটি বীরত্ব আছে। কোনওটির কোনওকালে কোনও রচয়িতা ছিল বলিয়া পরিচয়মাত্র নাই এবং কোন শকের কোন তারিখে কোনটা রচিত হইয়াছিল এমন প্রশ্নও কাহারও মনে উদয় হয় না। এই স্বাভাবিক চিরত্বগুণে ইহারা আজ রচিত হইলেও পুরাতন এবং সহস্র বৎসর পূর্বে রচিত হইলেও নূতন।' (লোকসাহিত্য-প্রবন্ধ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)। ১৩০৬ বঙ্গাব্দে রবীন্দ্রনাথের প্ররোচনায় এবং রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর উৎসাহে যোগীন্দ্রনাথ সরকার তাঁর কালজয়ী ‘খুকুমণির ছড়া' সংকলনটি প্রকাশ করেন। ‘আধুনিক ভারতীয় আর কোনও ভাষায় সাহিত্যে এ বইটির প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। বইটির মর্যাদা কখনই কমবে না।' (ভূমিকা: সুকুমার সেন, বাংলাদেশের ছড়া: ভবতারণ দত্ত)। এরও পরে আশুতোষ ভট্টাচার্য ও ভবতারণ দত্তের বই দু'টি ছড়া সংগ্রহের ক্ষেত্রে এক অমূল্য সম্পদ। কিন্তু সব ছড়াই মূলত তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত হয়েছে। ছেলে ভুলানো ছড়া, খেলার সময় ব্যবহৃত ছড়া ও ধাঁধা শ্রেণির ছড়া। কোনও সংকলকই কলকাতা বিষয়ক ছড়ানো ছড়াগুলিকে একত্রে বাঁধার চেষ্টা করেননি। একমাত্র হরিহর শেঠ লিখিত 'প্রাচীন কলিকাতা পরিচয়' বইটিতে একটি আলাদা পরিচ্ছদই শুধু আছে, কলকাতা বিষয়ক কিছু সংখ্যক ছড়া নিয়ে।